উত্তরঃ
যেহেতু অন্যের কাছ থেকে ঋণ হিসেবে টাকা গ্রহণ করেছেন, সুতরাং উক্ত ঋণ আপনি ভোগ না করলেও তা আপনাকে পরিশোধ করতে হবে। হাদীস শরীফে এসেছে,
نفس المؤمن معلقة بدينه حتى يقضى عنه. رواه الترمذي (1079)، وقال: هذا حديث حسن.
“ঋণ পরিশোধ করা পর্যন্ত মুমিনের রূহ ঋণের দায়ে আবদ্ধ থাকে।” -সুনানুত তিরমিযী: হাদীস নং ১০৭৯
হাদীসে আরও এসেছে,
يغفر للشهيد كل ذنب إلا الدين. صحيح مسلم (1886)
“ঋণ ব্যতীত শহীদের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।” -সহীহ মুসলিম: হাদীস নং ১৮৮৬
ঋণ গ্রহীতা যদি ঋণ পরিশোধে আন্তরিক হয়, আল্লাহ তাকে ঋণ পরিশোধে সাহায্য করেন। হাদীস শরীফে এসেছে,
عن عبيد الله بن عبد الله بن عتبة، أن ميمونة، زوج النبي صلى الله عليه وسلم استدانت فقيل لها: يا أم المؤمنين، تستدينين وليس عندك وفاء، قالت: إني سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: «من أخذ دينا وهو يريد أن يؤديه، أعانه الله عز وجل». رواه النسائي في المجتبى(4687)، وقال الأرنؤوط في تعليقه على ابن حبان (11/420): وهذا إسناد صحيح، رجاله رجال الشيخين.
“উবায়দুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উতবা (রহ) বলেন, উম্মুল মুমিনীন মাইমূনা (রাযি) ঋণ গ্রহণ করলেন। তাঁকে বলা হলো, হে উম্মুল মুমিনীন! আপনি তো ঋণ নিচ্ছেন, অথচ ঋণ পরিশোধ করার মতো সম্পদ আপনার কাছে নেই। তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি ঋণ নিয়ে তা পরিশোধের ইচ্ছা রাখে, আল্লাহ তায়ালা তাকে সাহায্য করেন।” -সুনানুন নাসায়ী: হাদীস নং ৪৬৮৭
অবশ্য ঋণ পরিশোধে আন্তরিক হয়ে পরিশোধের পূর্ণ চেষ্টা অব্যাহত রাখার পরও কেউ যদি ঋণ পরিশোধ করতে অক্ষম হয়, তাহলে তার চেষ্টা ও সদিচ্ছার প্রতিদানস্বরূপ আল্লাহ তায়ালা হাশরের দিন নিজ অনুগ্রহে তার ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করে দিবেন। হাদীস শরীফে এসেছে,
«من أخذ أموال الناس يريد أداءها أدى الله عنه، ومن أخذ يريد إتلافها أتلفه الله». رواه البخاري في الصحيح (2387(.
“যে ব্যক্তি মানুষের মাল (ধার) নেয় পরিশোধ করার উদ্দেশ্যে, আল্লাহ তায়ালা তা আদায় করে দিবেন। আর যে তা নেয় বিনষ্ট করার নিয়তে, আল্লাহ তায়ালা তাকে ধ্বংস করবেন। -সহীহ বুখারী: হাদীস নং ২৩৮৭
হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী (রহ) বলেন,
إما بأن يفتح عليه في الدنيا وإما بأن يتكفل عنه في الآخرة. اهـ. فتح الباري (5/ 54(
“(আল্লাহ তার ঋণ দুই প্রক্রিয়ায় আদায় করবেন) হয় দুনিয়াতে তাকে সচ্ছলতা দান করবেন (যাতে ঋণ পরিশোধে সক্ষম হয়) অথবা পরকালে তার পক্ষ থেকে যামিন হয়ে যাবেন।” -ফাতহুল বারী: ৫/৪৫
পক্ষান্তরে কেউ যদি ঋণ পরিশোধের ইচ্ছা না রাখে তার সম্পর্কে হাদীসে এসেছে,
أيما رجل تدين دينا وهو مجمع أن لا يوفيه إياه لقي الله سارقا. رواه ابن ماجه في السنن(2410) باسنادين. أما الثاني فحسنه البوصيري في مصباح الزجاجة ( 3/64).
“যেকোনো ব্যক্তি ঋণ গ্রহণ করলো এবং তা পরিশোধ না করতে সংকল্পবদ্ধ, (কিয়ামতের দিন) সে আল্লাহর সাথে চোররূপে সাক্ষাত করবে।” -সুনানে ইবনে মাজাহ: হাদীস নং ২৪১০
উল্লেখ্য, ফুকাহায়ে কেরাম যেখানে বলেছেন, ‘জিহাদ ফরযে আইন হলে সব কিছু বাদ দিয়ে তাৎক্ষণিক জিহাদে বেরিয়ে পড়তে হবে; ঋণদাতার অনুমতিও লাগবে না’- তা দ্বারা উদ্দেশ্য হল, যখন শত্রুরা মুসলিমদের উপর আক্রমণ করে এবং আমাদের মোকাবেলা করার সামর্থ্য আছে, আমরা তৎপর হলেই তাদের প্রতিহত করা সম্ভবপর।
কিন্তু আমাদের বর্তমান পরিস্থিতি এমন নয়। বরং এখানে শত্রুরা আমাদের উপর বিজয় লাভ করে দখল ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করে নিয়েছে এবং আমরা এত দুর্বল স্তরে পৌঁছেছি যে, তাদের বিরুদ্ধে ফিলহাল আমাদের কিতালের সামর্থ্য নেই। এই পরিস্থিতিতে জিহাদ ফরযে আইন ঠিক, কিন্তু জিহাদের জন্য তাৎক্ষণিক বের হয়ে পড়া ফরয নয়; বরং এখন দায়িত্ব হল, প্রস্তুতি গ্রহণ ও সামর্থ্য অর্জনের চেষ্টা করা। সামর্থ্য অর্জিত হলে বের হওয়া। এ প্রস্তুতি পর্বটির সঙ্গে যতক্ষণ অন্যান্য ফরযগুলো সাংঘর্ষিক না হবে, ততক্ষণ প্রস্তুতির পাশাপাশি অন্যান্য ফরযগুলোও আদায় করে যেতে হবে।
অতএব, আপনি ঋণদাতার ঋণ পরিশোধের চেষ্টা করুন। একই সঙ্গে যতটুকু সম্ভবপর জিহাদের কাজ করে যান। যদি এর মাঝে শাহাদাত নসীব হয়, অথবা স্বাভাবিক মৃত্যুও হয় (আল্লাহ আপনাকে হায়াতে তাইয়্যিবা দান করুন), তবুও আপনার সদিচ্ছার প্রতিদানস্বরূপ আল্লাহ তায়ালা নিজ অনুগ্রহে আপনার ঋণ পরিশোধ করে দেবেন ইনশাআল্লাহ। -দেখুন: রদ্দুল মুহতার: ৪/১২০; শারহুস সিয়ারিল কাবীর: ১/২৩-২৫, প্রথম অধ্যায়, ফাযীলাতুর রিবাত।
فقط والله تعالى أعلم بالصواب.
আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)
#উচ্চতর #ইসলামী #আইন #গবেষণা #বিভাগ #ফাতওয়া
১৮-১০-২০২৪ঈ