প্রশ্ন:

আমি 

 

উত্তর:

স্বামী-স্ত্রী হচ্ছে জোড়া। এক জোড়ার দুই অংশ একসঙ্গে থাকবে এটা যেমন সৃষ্টিগত স্বাভাবিক নিয়ম, তেমনি শরীয়তেও কাম্য। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের স্বাভাবিক জীবন এমনই ছিলো। বর্তমান ফিতনাপূর্ণ যমানায় তা আরও বেশি জরুরি। হ্যাঁ, বিশেষ প্রয়োজনে যদি দূরত্ব অবলম্বন করতে হয়, তাহলে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, যাতে একারণে কারো গুনাহে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি না হয়।

জিহাদের মতো প্রয়োজনীয় কাজে যখন স্ত্রীদের থেকে দূরে থাকতে হয়, তখনও উমর (রাযি) মুজাহিদদেরকে চার থেকে ছয় মাসের মধ্যে স্ত্রীদের কাছে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ফুকাহায়ে কেরাম বলেছেন, এই মেয়াদ সুনির্দিষ্ট নয়; ব্যক্তিবিশেষে তা ব্যবধান হতে পারে। কোনো স্বামী-স্ত্রীর যদি দীর্ঘ দিনের দূরত্বের কারণে গুনাহে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা না দেয়, তাহলে প্রয়োজনে পরস্পর সম্মতিক্রমে ছয় মাস থেকে বেশিও দূরে থাকতে পারবে। পক্ষান্তরে কারো যদি চার থেকে ছয় মাসের বিচ্ছেদেও গুনাহে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়, তাহলে তাদের বিচ্ছেদের মেয়াদ এই পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে, যাতে গুনাহে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা বিলোপ করে উভয়ের পবিত্রতা রক্ষা করা যায়। -মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক: ৭/১৫১; ফাতহুল কাদীর: ৩/৪৩৫; ফাতাওয়া শামী: ৩/২০১; ইমদাদুল আহকাম: ২/৩৮১; ফাতাওয়া উসমানী: ২/৩১০-৩১২

আপনি কী উদ্দেশ্যে লম্বা সফরে যাবেন এবং কত লম্বা সফরে যাবেন, তা স্পষ্ট করেননি। মনে রাখবেন, আমাদের দেশে শুধু অধিক পরিমাণে দুনিয়া উপার্জনের উদ্দেশ্যে স্ত্রীদের দেশে রেখে বছরের পর বছরের জন্য বিদেশে পড়ে থাকার রীতি যেভাবে ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর রূপ নিয়েছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও গর্হিত কাজ। একারণে যুবকরা যেমন বিভিন্ন পাপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে, তেমনি দীর্ঘমেয়াদে নিঃসঙ্গ রেখে যাওয়া স্ত্রীদের কারণেও সমাজে যিনা ব্যভিচারের মতো জঘন্য পাপকর্ম মহামারির রূপ ধারণ করছে। আল্লাহ আমাদের সংশোধন করুন, ক্ষমা করুন। অথচ সামান্য দুনিয়ার উচ্চাবিলাস ত্যাগ করলে একজন যুবকের জন্য দেশেই সম্মানের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা তেমন কঠিন বিষয় নয়।

সুতরাং আপনি কী উদ্দেশ্যে দূরের দীর্ঘ সফরে যাবেন, তা আদৌ শরীয়ত সমর্থন করে কি না বা শরীয়ত তা প্রয়োজন মনে করে কি না? আপনার বিবাহের প্রয়োজন কোন্ স্তরের? আপনার উপর বিবাহ ফরয হয়ে আছে কি না? ইত্যাদি বিষয়গুলো কোনো বিজ্ঞ ও মুত্তাকি আলেমের সামনে পেশ করে, তাঁর পরামর্শের আলোকে সিদ্ধান্ত নিন। কিছুতেই এমন সিদ্ধান্ত নিবেন না, যাতে স্ত্রীর হক এবং উভয়ের পবিত্রতার মতো মূল্যবান বিষয় ঝুঁকিতে পতিত হয়। একান্ত যদি খুব আসন্ন কোনো সফর সামনে রেখেই বিয়ে করতে হয়, তাহলে সফরের বিষয়টি হবু স্ত্রীর সঙ্গে আগেই বুঝাপড়া করে নিতে পারেন, যাতে তারও অনাকাঙ্ক্ষিত কষ্টের সম্মুখীন হতে না হয় এবং হক নষ্ট করার প্রসঙ্গ না আসে।

আরও বিস্তারিত জানতে দেখুন: ২৯০-একাধিক স্ত্রীর মাঝে ইনসাফ ও সমতা রক্ষার বিধান কী?

والله سبحانه وتعالى أعلم

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)

 

১৮-১০-২০২৪ ঈ.

#উচ্চতর #ইসলামী #আইন #গবেষণা #বিভাগ #ফাতওয়া