প্রশ্নঃ
অল্প বয়সে কারো দাড়ি বা মাথার চুল সাদা হয়ে গেলে সেগুলো উঠিয়ে ফেলার হুকুম কী?
প্রশ্নকারী- আবদুল্লাহ
উত্তরঃ
بسم الله الرحمن الرحيم
الحمد لله و كفى وسلام على عباده الذين اصطفى أما بعد:
পরিণত বয়সের কারণে পাকা চুল উঠানো নিষেধ। হাদীসে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা এসেছে। ইমাম আবু দাউদ (রহ) (২৭৫ হি) বর্ণনা করেন,
قالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى اللَّه عليه وسلم-: “لا تَنْتِفُوا الشَّيْبَ ما مِنْ مُسْلِمٍ يَشِيبُ شَيْبَةً في الإِسْلامِ”. قالَ: عَنْ سُفْيانَ: “إِلَّا كانَتْ لَهُ نُورًا يَوْمَ القِيامَةِ”. وقالَ في حَدِيثِ يَحْيَى: “إِلَّا كَتَبَ اللَّهُ لَهُ بِها حَسَنَةً وَحَطَّ عَنْهُ بِها خَطِيئَةً”. -رواه أبو داود في سننه: كتاب الترجل، باب في نتف الشيب، 6/266، الرقم: 4202، ط. دار الرسالة العالمية. و قال الشيخ شعيب الأرنؤوط رحمه الله تعالى: صحيح لغيره، وهذا إسناد حسن. اهـــ
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা পাকা চুল তুলে ফেলো না। ইসলামের উপর থেকে কোনো মুসলিমের চুলে পাক ধরলে, কেয়ামতের দিন তা তার জন্য নূরে পরিণত হবে।
অন্য বর্ণনা মতে এর বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা তাকে সওয়াব দান করবেন এবং তার গুনাহ মাফ করবেন।” –সুনানে আবু দাউদ: ৪২০২
সহীহ মুসলিমে এসেছে,
عن أنس بن مالك، قال: ” يكره أن ينتف الرجل الشعرة البيضاء من رأسه ولحيته. -صحيح مسلم (دار الجيل بيروت + دار الأفاق الجديدة ـ بيروت، الرقم: 6223)، كتاب الفضائل، باب شيبه صلى الله عليه وسلم
“আনাস বিন মালিক (রাযি) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মাথা ও দাড়ি থেকে সাদা চুল তুলে ফেলা মাকরুহ।” –সহীহ মুসলিম: ৬২২৩
ইমাম নববী (রহ) (৬৭৬ হি) বলেন,
يكره نتف الشيب لحديث عمرو بن شعيب عن أبيه عن جده عن النبي صلى الله عليه وسلم قال لا تنتفوا الشيب فإنه نور المسلم يوم القيامة. حديث حسن. رواه أبو داود والترمذي والنسائي وغيرهم بأسانيد حسنة. قال الترمذي: حديث حسن. هكذا قال أصحابنا: يكره. صرح به الغزالي كما سبق والبغوي وآخرون. ولو قيل يحرم للنهي الصريح الصحيح لم يبعد. ولا فرق بين نتفه من اللحية والرأس. -المجموع شرح المهذب للنووي (1/ 292)، ط. دار الفكر
“পাকা চুল উঠিয়ে ফেলা মাকরুহ। এর দলীল ‘আমর বিন শুআইব আন আবিহি আন জাদ্দিহি’ সূত্রে রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হাদীস, ‘তোমরা পাকা চুল তুলে ফেলো না। কেননা, তা কিয়ামতের দিন মুমিনের নূর।’ হাদীসটি হাসান। ইমাম আবু দাউদ, তিরমিযী ও নাসায়ীসহ আরও অনেকে হাসান সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী (রহ) বলেন, ‘হাদীসটি হাসান।’ আমাদের মাযহাবের ইমামগণ এমনটাই বলেছেন যে, তা মাকরুহ হবে। … অবশ্য যেহেতু সহীহ এবং সরীহ (সুস্পষ্ট) নিষেধাজ্ঞা এসেছে, তাই হারাম বললেও অত্যুক্তি হবে না। এক্ষেত্রে দাড়ি থেকে উঠানো বা মাথা থেকে উঠানোর মাঝে কোনো ব্যবধান নেই।” –আলমাজমু: ১/২৯২
ইবনু জুযাই মালিকি (রহ) (৭৪১ হি) বলেন,
وَيكرهُ نتف الشيب وَإِن قصد بِهِ التلبيس على النِّسَاء فَهُوَ أَشد فِي الْمَنْع. -القوانين الفقهية (ص: 293) لابن جزي المالكي (741هـ(
“পাকা চুল উঠিয়ে ফেলা মাকরুহ। যদি (নিজেকে জাওয়ান দেখিয়ে) নারীদের ধোঁকায় ফেলা উদ্দেশ্য হয়, তাহলে তো আরও শক্ত নিষেধ।” –আলকাওয়ানিনুল ফিকহিয়া, পৃষ্ঠা: ২৯৩
অবশ্য মুজাহিদদের জন্য শত্রুর মনে ত্রাস সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে পাকা চুল উঠিয়ে ফেলা জায়েয। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ৫/৪১৫; রদ্দুল মুহতার: ৬/৭৫৬
এমনিভাবে অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে বয়সের আগে কারো চুল পেকে গেলে, তাও উঠিয়ে ফেলার অবকাশ আছে। -ইমদাদুল আহকাম: ২/১৪০, আহসানুল ফাতাওয়া: ৮/১৮৩
উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে চুল বেশি পরিমাণে পেকে গেলে না উঠিয়ে বরং খেজাব ব্যবহার করবে। -হাশিয়াতুত তাহতাবি আলাল মারাকি, পৃষ্ঠা: ৫২৬
মুজাহিদদের জন্য এবং পরিণত বয়সের আগেই যাদের চুল পেকে গেছে, তাদের জন্য কালো খেজাব ব্যবহারেরও অবকাশ আছে। তবে উত্তম হল, সামান্য মেহেদি রং মিশিয়ে নেওয়া, যাতে পূর্ণ কালো না হয়।
فقط والله تعالى أعلم بالصواب.
আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)
#উচ্চতর #ইসলামী #আইন #গবেষণা #বিভাগ #ফাতওয়া
০২-১১-২০২৪