ইসলামের দৃষ্টিতে যে সন্তান জারজ বলে সাব্যস্ত হবে, তার পারিবারিক ও সামাজিক মর্যাদা বা অধিকার কী হবে?
এর সংক্ষিপ্ত উত্তর হল, তার রক্ষণাবেক্ষণ, প্রতিপালনসহ ধর্মীয় প্রায় সকল বিধান বৈধ সন্তানের অনুরূপ। কেননা, এখানে সন্তানের কোনো দোষ নেই; বরং দোষ তার মা-বাবার, তাই তার বৈধ অধিকার ইসলামে সাব্যস্ত রয়েছে। তবে কিছু কিছু বিধানে সবার চেয়ে পার্থক্যও রয়েছে। যেমন,
—তার বংশ মায়ের থেকে সাব্যস্ত হবে। যেহেতু বাবা অবৈধ, তাই অবৈধ বাবার সঙ্গে সম্পর্কিত হবে না। কেননা রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, الْوَلَدُ لِلْفِرَاشِ সন্তান বৈধ স্বামীরই হয়। (বুখারি ২০৫৩)
—তার ভরণ-পোষণ ও লালন-পালনের অধিকারী হবে তার মা। মায়ের পক্ষ সন্তানের ভরণ-পোষণ বহন করবে। অর্থাৎ তার মায়ের ভরণ-পোষণ যাঁর দায়িত্বে, তার ভরণ-পোষণও তিনিই দেবেন।
—মায়ের পক্ষ তার আকিকা করবে। অর্থাৎ তার মায়ের ভরণ-পোষণ যাঁর দায়িত্বে, তার আকিকা তিনিই করবেন। তবে এসব সন্তানের আকিকার ক্ষেত্রে গোপনীয়তা উত্তম, যাতে সন্তানের মর্যাদা ক্ষুণ্ন না হয়। (হাশিয়াতুশ শারবিনি আলা তুহফাতিল মুহতাজ ৩/৩১১)
— এই সন্তানের বংশ যেহেতু মায়ের থেকে সাব্যস্ত, তাই সে মা ও মায়ের নিকটাত্মীয়দের উত্তরাধিকারী হবে। (রদ্দুল মুহতার ৬/৭৭৬)
—তাকে মুয়াজ্জিন বানানো বৈধ, তবে উপযুক্ত অন্য কেউ থাকা অবস্থায় তাকে মুয়াজ্জিন বানানো অনুত্তম। এর দুটি কারণ রয়েছে—এক. স্বাভাবিকভাবে সবার দৃষ্টিতে পবিত্র ও সম্মানিত ব্যক্তিকে মুয়াজ্জিন বানানো হয়। মানুষের দৃষ্টিতে ওই সব সন্তান যেহেতু একটু অন্য রকম মনে হয়, তাই এমন সন্তানকে মুয়াজ্জিন বানানো বৈধ হলেও মাকরুহ। দ্বিতীয়ত, তাদের অভিভাবকত্বের ত্রুটির কারণে তারা বেশির ভাগই সুশিক্ষিত হয় না, তাই তাদের চেয়ে অন্যরা এ ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবে। (মাবসুতে সারাখসি ১/১৩৭-১৩৮, বাদায়েউস সানায়ে ১/১৫০)
–— ইমামতির উপযুক্ত অন্য কেউ থাকা অবস্থায় তাকে ইমাম বানানো মাকরুহ, এ ক্ষেত্রে আগে উল্লিখিত দুটি কারণেই তাদের ইমামতি মাকরুহ। তবে যদি সে আলেম ও উপযুক্ত হয়, তখন তাকে ইমাম বানানো মাকরুহ নয়। (রদ্দুল মুহতার ১/৫৬২)
—তাকে ব্যভিচারী বা জারজ বলে গালি দেওয়া যাবে না। এমনকি কেউ যদি তাকে ব্যভিচারী বলে গালি দেয়, তাকে অপবাদ দেওয়ার শাস্তি প্রয়োগ করা হবে। কেননা তার মা-বাবা অন্যায়কারী হলেও সে ওই অন্যায়ে অংশীদার নয়। (মাবসুতে সারাখসি ৯/১২৭)
২৬/১২/২৪ঈ