প্রশ্ন: খাঁচায় বন্দী করে পাখি পালন করা কি জায়েয আছে?
প্রশ্নকারী- শামসুদ্দীন হালবী
উত্তর:
যথাযথ হক আদায় সাপেক্ষে খাঁচায় বন্দী করে পাখি পালন জায়েয। যেমন ঠিকমতো দানা পানি দেয়া, কোনো প্রকার কষ্ট না দেয়া, সময়মতো জোড়ার তথা মিলনের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি। খোদ রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এর সমর্থন পাওয়া যায়।
সহীহ বুখারীতে আনাস (রা)থেকে বর্ণিত হয়েছে,
كان النبي صلى الله عليه و سلم أحسن الناس خلقا وكان لي أخ يقال له أبو عمير – قال أحسبه – فطيم وكان إذا جاء قال ( يا أبا عمير ما فعل النغير ) . نغر كان يلعب به. -صحيح البخاري (دار ابن كثير) (5/ 2291)، الرقم: 5850 قال الحافظ فى الفتح (10\584): والراجح أن النغير طائر أحمر المنقار. اهـ
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বোত্তম চরিত্রের মানুষ ছিলেন। আবু উমায়ের নামে আমার এক ভাই ছিল, যে মাত্র দুধ ছাড়ার বয়স পেরিয়েছে। তার একটি পাখি ছিল, যেটি নিয়ে সে খেলতো। (একদিন পাখিটি মারা গেল এবং এতে সে কষ্ট পেল, এরপর) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আসতেন, (মজা করে) বলতেন, আবু উমায়ের! তোমার পাখিটির কি খবর?…” –সহীহ বুখারী: ৫৮৫০
স্বাভাবিক এটিই যে, পাখিটি খাঁচায় থাকতো এবং ছেলেটি তা নিয়ে খেলতো।
হাফেয ইবনে হাজার (রহ)(৮৫২ হি.) বলেন,
وفيه … جواز لعب الصغير بالطير وجواز ترك الأبوين ولدهما الصغير يلعب بما أبيح اللعب به وجواز إنفاق المال فيما يتلهى به الصغير من المباحات وجواز إمساك الطير في القفص. اهـ فتح الباري لابن حجر (دار المعرفة) (10/ 584)
“এতে (হাদীসটিতে)… বাচ্চাদের পাখি নিয়ে খেলা করা, বৈধ খেলায় পিতা-মাতার বাঁধা না দেয়া, বাচ্চাদের বৈধ খেলাধূলার জন্য কিছু অর্থ খরচ করা এবং খাঁচায় বন্দী করে পাখি পালন করা ইত্যাদির বৈধতা প্রমাণ করে।” –ফাতহুল বারী: ১০/৫৮৪
এছাড়া কিছু সাহাবী(রা) থেকেও খাঁচায় পাখি লালন-পালন করার কথা বর্ণিত আছে। হিশাম ইবনে উরওয়া (রহ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كَانَ ابْنُ الزّبَيْرِ بِمَكّةَ وَأَصْحَابُ النّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يَحْمِلُونَ الطّيْرَ فِي الْأَقْفَاصِ. –الأدب المفرد (دار البشائر)، رقم الحديث: 383، باب: الطَّيْرِ فِي الْقَفَصِ
“আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রা)(তাঁর শাসনামলে) যখন (রাজধানী) মক্কায় ছিলেন, সাহাবীগণ তখন খাঁচায় পাখি রাখতেন।” -আল আদাবুল মুফরাদ, হাদীস ৩৮৩
পাখিকে যে কষ্ট দেয়া যাবে না, এবিষয়ে প্রথমোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনে হাজার (রহ)(৮৫২ হি.) বলেন,
قال أبو عبد الملك يجوز أن يكون ذلك منسوخا بالنهي عن تعذيب الحيوان وقال القرطبي الحق أن لا نسخ بل الذي رخص فيه للصبي إمساك الطير ليلتهي به وأما تمكينه من تعذيبه ولا سيما حتى يموت فلم يبح قط. اهـ فتح الباري لابن حجر (دار المعرفة) (10/ 584، 586)
“কুরতুবি (রহ) বলেন, …সহীহ কথা হচ্ছে, হাদীসটিতে বাচ্চাদের জন্য খাঁচায় পাখি রাখার অনুমতি দেয়া হয়েছে, যাতে তারা তা নিয়ে খেলতে পারে। কিন্তু বাচ্চারা পাখিকে কষ্ট দেবে, বিশেষত তা যদি মৃত্যু পর্যন্ত নিয়ে যায়, অভিভাবকদের জন্য বাচ্চাদেরকে এ সুযোগ দেয়ার অনুমতি নেই।” –ফাতহুল বারী: ১০/৫৮৬
অনেক হাদীসে পশু-পাখিকে অনর্থক কষ্ট দিতে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এমনকি এ কারণে অতীতে এক ব্যক্তি জাহান্নামী হয়েছে বলেও সহীহ বুখারীর একটি হাদীসে এসেছে,
نافع عن عبد الله بن عمر رضي الله عنهما : أن رسول الله صلى الله عليه و سلم قال ( عذبت امرأة في هرة سجنتها حتى ماتت فدخلت فيها النار لا هي أطعمتها ولا سقتها إذ حبستها ولا هي تركتها تأكل من خشاش الأرض ). –صحيح البخاري (دار ابن كثير) (3/ 1284)، رقم الحديث: 3295
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, একটি বিড়ালকে কষ্ট দেয়ার কারণে এক মহিলাকে শাস্তি দেয়া হয়েছে। বিড়ালটিকে সে বন্দী করে রেখেছিল এবং বন্দী অবস্থায়ই সেটি মারা যায়। এ কারণে সে মহিলা জাহান্নামী হয়। না সে বিড়ালটিকে খাবার দিয়েছিল, না পানি দিয়েছিল, আর না সেটিকে ছেড়ে দিয়েছিল, যাতে সেটি পোঁকামাকড় খেয়ে বাঁচতে পারে।” –সহীহ বুখারী: ৩২৯৫
উল্লেখ্য, খোলা আকাশে জীবন যাপনে অভ্যস্ত পাখি খাঁচায় বন্দী করে তার হক আদায় করা কঠিন; যদি না তাকে পোষ মানানো যায়। একারণে কারো পাখি পালনের আগ্রহ হলে তার জন্য নিরাপদ হল,তিনি প্রজনন থেকে শুরু করে সবকিছুতেই খাঁচায় অভ্যস্ত, এরূপ পাখি প্রতিপালন করতে পারেন,যেমন
কবুতর, বাজরিগার, লাভ বার্ড, মুনিয়া, বিদেশি কোয়েল ইত্যাদি পাখি পালন করতে পারেন।
فقط، والله تعالى أعلم بالصواب
আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)
১১-১১-২০২৪ ঈ.
#উচ্চতর #ইসলামী #আইন #গবেষণা #বিভাগ #ফাতওয়া