.
প্রশ্নঃ
.
আমাদের অনেকেরই নাম, আব্দুর রহীম, আব্দুল করীম, আব্দুল খালিক, আব্দুর রাযযাক ইত্যাদি। আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নাম রহীম, রহমান, করীম, খালিক, রাযযাক ইত্যাদির শুরুতে আবদ শব্দ যোগ করে নামগুলো রাখা হয়েছে। এভাবে নাম রাখতে সমস্যা নেই, তা সবারই জানা। তবে আমার জানার বিষয় হলো, ধরুন কারও নাম আব্দুর রহীম বা আব্দুল করীম। কিন্তু অন্যরা তাকে শুধু রহীম বা করীম বলে ডাকে। অথচ আমরা জানি, এই নামগুলো আল্লাহ তাআলার সঙ্গে খাস। তাহলে এভাবে ডাকা কি ঠিক হবে?
.
প্রশ্নকারী- মাহমুদ
.
উত্তরঃ
.
بسم الله الرحمن الرحيم
.
আল্লাহ তাআলার কিছু নাম আছে, যেগুলো একমাত্র আল্লাহ তাআলার সঙ্গে খাস। অন্য কারও জন্য সেগুলো ব্যবহার করা জায়েয নয়। যেমন আল্লাহ, খালিক, রাযযাক ইত্যাদি। এগুলোর শুরুতে ‘আবদ’ যুক্ত করে আব্দুল্লাহ, আব্দুল খালিক ও আব্দুর রাযযাক নাম রাখলে; অর্থ দাঁড়ায় যথাক্রমে আল্লাহর বান্দা, খালিকের বান্দা ও রাযযাকের বান্দা। ‘আব্দুল্লাহ’ থেকে ‘আবদ’ বাদ দিয়ে শুধু আল্লাহ বলে যেমন কাউকে ডাকা জায়েয নয়, তেমনি ‘আব্দুল খালিক’ ও ‘আব্দুর রাযযাক’ থেকে ‘আবদ’ বাদ দিয়ে শুধু ‘খালিক’ ও ‘রাযযাক’ বলে কাউকে ডাকাও জায়েয নয়। কারণ ‘খালিক’ তথা সৃষ্টিকর্তা ও ‘রাযযাক’ তথা রিযিকদাতা একমাত্র আল্লাহ, অন্য কেউ নয়। বান্দাকে ‘খালিক’ ও ‘রাযযাক’ বলার অর্থ তাকে সৃষ্টিকর্তা ও রিযিকদাতা বলা। এটা সম্পূর্ণ ঈমান পরিপন্থী। কেউ যদি কোনও বান্দা সম্পর্কে এমন বিশ্বাস রাখে, তার ঈমান থাকবে না।
.
এছাড়া আল্লাহর এমন কিছু নাম আছে, যেগুলো তাঁর সঙ্গে খাস নয়; বরং তা আল্লাহর জন্যও ব্যবহৃত হয়, আবার বান্দার ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়। যেমন রাহীম, আযীয, রাউফ ইত্যাদি। এগুলোর শেষে কোনও শব্দ যুক্ত করে যখন কারও নাম রাখা হয়, যেমন রাহীমুদ্দীন, রাউফুদ্দীন, আযীযুর রহমান, তখন এগুলোর অর্থ দাঁড়ায় যথাক্রমে দীনের প্রতি দয়াশীল, দীনের প্রতি বিনম্র ও রহমানের প্রিয় পাত্র ।এক্ষেত্রে পরের অংশ বাদ দিয়ে শুধু রাহীম, আযীয ও রাউফ বলে ডাকতে কোনও অসুবিধা নেই। কারণ এতে অর্থগত সমস্যা যেমন তৈরি হয় না, তেমনি আল্লাহর খাস নামও অন্যের জন্য ব্যবহৃত হয় না।
.
পক্ষান্তরে এই দ্বিতীয় শ্রেণির নামগুলোর শুরুতে ‘আবদ’ শব্দ যুক্ত করে যদি কারও নাম রাখা হয়, আব্দুর রহীম, আব্দুর রাউফ বা আব্দুল আযীয, তখন অর্থ দাঁড়ায় যথাক্রমে রাহীমের বান্দা, রাউফের বান্দা ও আযীযের বান্দা। স্বভাবতই যখন রাহীম, রাউফ ও আযীযের বান্দা বলা হয়, তখন রাহীম, আযীয ও রাউফ দ্বারা আল্লাহ উদ্দেশ্য হয়। সুতরাং এভাবে কারও নাম রাখা হলে, তাকেও ‘আবদ’ বাদ দিয়ে শুধু রাহীম, আযীয ও রাউফ ডাকা থেকে বিরত থাকা কাম্য। -শরহুল ফিকহিল আকবার, পৃ: ৫১৫ দারুল বাশায়ের; রদ্দুল মুহতার: ৬/৪১৭ দারুল ফিকর, বৈরুত; মাআরিফুল কুরআন, মুফতী শফী রহ. ৪/১৩২-১৩৩, মাকতাবা মাআরিফুল কুরআন; আপকি মাসায়েল: ৭/৩১, মাকতাবা লুধিয়ানবী; ফাতাওয়া মাহমুদিয়া: ২৯/২৩১ যাকারিয়া বুক ডিপো, ভারত; আল-ইসলাম: সুওয়াল ও জাওয়াব, ফাতাওয়া ন: ২২৩৮৫৫; ইসলাম ওয়েব, ফাতাওয়া নং: ৭৭২২৪
.
এমনিভাবে কারও নাম এমনভাবে সংক্ষিপ্ত করে কিংবা পরিবর্তন করে ডাকাও ঠিক নয়, যা বিকৃতির মধ্যে পড়ে কিংবা যার কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কষ্ট পেতে পারে।
.
والله تعالى أعلم بالصواب
.
আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)
.
২৯১০-২০২৪ ঈ.