প্রশ্নঃ
আমি একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। সেখানে বেতনের পাশাপাশি কিছু বাড়তি আয়েরও সুযোগ আছে। আমি যদি সেই বাড়তি আয় থেকে মুজাহিদদের জন্যে দান করি, তাহলে এই দান কি আল্লাহ কবুল করবেন? আমি সময় বা জান দিয়ে সহায়তা করতে পারছি না তাই মাল দিয়ে সহায়তা করার চেষ্টা করি।
উত্তরঃ
بسم الله الرحمن الرحيم
আমাদের সমাজে সাধারণত ঘুষ,দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জন করাকে বাড়তি আয় বলা হয়। আপনার উদ্দেশ্য যদি এটাই হয়,তবে তা সম্পূর্ণ হারাম। হারাম অর্থ দান করলে আল্লাহ তা কবুল করেন না।
হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ اللَّهَ طَيِّبٌ لاَ يَقْبَلُ إِلاَّ طَيِّبًا وَإِنَّ اللَّهَ أَمَرَ الْمُؤْمِنِينَ بِمَا أَمَرَ بِهِ الْمُرْسَلِينَ فَقَالَ ( يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا إِنِّى بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ) وَقَالَ (يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ) ». ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ يَا رَبِّ يَا رَبِّ وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ وَغُذِىَ بِالْحَرَامِ فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لِذَلِكَ. – صحيح مسلم للنيسابوري (3/ 85)
“আবু হুরায়রা (রাযি) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, হে মানুষেরা! নিশ্চয় আল্লাহ উত্তম ও পবিত্র। তিনি উত্তম ও পবিত্র ব্যতীত কবুল করেন না। তিনি রাসূলদেরকে যে আদেশ করেছেন, মুমিনদেরও তা-ই আদেশ করেছেন। তিনি বলেছেন, “হে রাসূলগণ! তোমরা উত্তম ও পবিত্র খাবার থেকে ভক্ষণ কর এবং নেক আমল কর। তোমরা যা কর, তা সম্পর্কে আমি সর্বজ্ঞাত।”
তিনি আরও বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমাদেরকে যে উত্তম ও পবিত্র রিযিক দিয়েছি, তা থেকে ভক্ষণ কর।”
এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন ব্যক্তির আলোচনা করলেন, যে দীর্ঘ সফর করে ধুলোমলিন চেহারা ও এলোকেশ নিয়ে আকাশের পানে হাত বাড়িয়ে দোয়া করে, ইয়া রাব্বি! ইয়া রাব্বি! অথচ তার খাবার হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম এবং শিশুকালেও সে হারাম দ্বারা লালিত পালিত হয়েছে।” –সহীহ মুসলিম: ৩/৮ হাদীস নং ২৩৯৩
আরেক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
“من جمع مالا حراما، ثم تصدق به، لم يكن له فيه أجر، وكان إصره عليه”. أخرجه ابن حبان، وقال الشيخ شعيب: إسناده حسن … وأخرجه الحاكم … وصححه، ووافقه الذهبي.
“যে ব্যক্তি হারাম সম্পদ উপার্জন করে তা সাদাকা করলো, সে কোনো সওয়াব পাবে না; বরং এর গুনাহ তার উপরই বর্তাবে।” -সহীহ ইবনে হিব্বান: ৩২১৬
জিহাদে দানের নিয়তেও এমন বাড়তি আয় বৈধ হবে না। বরং এতে গুনাহের মাত্রা আরও বেড়ে যাবে। আপনার উপর ফরয হচ্ছে, হালাল উপায়ে উপার্জিত সম্পদ দিয়ে জিহাদে অংশগ্রহণ করা। হারাম উপায়ে উপার্জিত এই সম্পদের মালিক আপনি নন; যাদের থেকে অন্যায়ভাবে তা নিয়েছেন, তারাই এই সম্পদের মালিক।
আপনার দায়িত্ব এতদিনের হারাম উপার্জন থেকে তাওবা করা এবং প্রকৃত মালিককে, কিংবা মালিক না পাওয়া গেলে মালিকের ওয়ারিসদের নিকট তা ফিরিয়ে দেয়া। যতক্ষণ মূল মালিক বা মালিকের ওয়ারিসদের পাওয়া যাবে, ততক্ষণ ভিন্ন কোনো সুযোগ নেই। মূল মালিক বা ওয়ারিসদের পরিচয় জানা না থাকলে বা খুঁজে বের করা সম্ভবপর না হলে, ওই সম্পদ সওয়াবের নিয়ত ব্যতীত শুধু হারামের দায়ভার থেকে মুক্তির উদ্দেশ্যে মূল মালিকের পক্ষ হতে যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত গরীবদের মাঝে সাদাকা করে দিতে হবে কিংবা মুসলিমদের জনকল্যাণমূলক কোনো কাজে বা জিহাদের কাজে ব্যয় করতে হবে। যাতে মালিক তার সম্পদ না পেলেও এর সওয়াবটুকু পেয়ে যান। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ) বলেছেন,
ومن أراد التخلص من الحرام والتوبة ولا يمكن رده إلى أصحابه فلينفقه في سبيل الله عن أصحابه فإن ذلك طريق حسنة إلى خلاصه مع ما يحصل له من أجر الجهاد. -مجموع الفتاوى 28/421-422، الناشر: مجمع الملك فهد لطباعة المصحف الشريف، المدينة النبوية، المملكة العربية السعودية
“যে ব্যক্তি হারাম থেকে দায়মুক্ত হতে চায় এবং তওবা করতে চায়; অথচ তা মালিকের নিকট পৌঁছানো সম্ভবপর নয়, তাহলে সে যেন তা মালিকের পক্ষ থেকে জিহাদের পথে খরচ করে। এটা দায়মুক্তির উত্তম পথ এবং এতে সে জিহাদে অংশ গ্রহণেরও সওয়াব পাবে।” -মাজমুউল ফাতাওয়া ২৮/৪২১-৪২২
– আরও দেখুন, রদ্দুল মুহতার ২/২৯২, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৯৬, ফাতাওয়া রশিদিয়া ২/৩৮১, ইমদাদুল ফাতাওয়া (জাদিদ) ৭/৩০, আহকামুল মালিল হারাম ২৭০-২৭১
فقط، والله تعالى أعلم بالصواب.
আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)
২৫-১০-২০২৪ ঈ.
#উচ্চতর #ইসলামী #আইন #গবেষণা #বিভাগ #ফাতওয়া