প্রশ্নঃ

ক্লিনিকের মালিকপক্ষ যদি রোগীর কাছ থেকে বেশি টাকা না নিয়ে রোগী পাঠানোর বিনিময়ে গ্রাম্য ডাক্তারকে রেফার-কমিশন দেয় (যেমন কিছু টেস্টের ওপর ৩০%-৫০%) তাহলে এতে কি মালিকপক্ষের গুনাহ হবে?

প্রশ্নকারী- আসাদউল্লাহ

উত্তরঃ

টেস্টের জন্য রোগী পাঠানোর বিনিময়ে ক্লিনিক-মালিক কর্তৃক ডাক্তারকে কমিশন দেওয়া এবং ডাক্তারের জন্য তা গ্রহণ করা কোনোটাই জায়েয নয়, বরং তা সম্পূর্ণ হারাম এবং ঘুষের অন্তর্ভুক্ত। হাদীসে এসেছে,

لعن رسول الله صلى الله عليه وسلم الراشي والمرتشي. -رواه أبو داود (3580) الترمذي (1337) وقال الترمذي: هذا حديث حسن صحيح.

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুষ দাতা ও গ্রহীতা উভয়ের উপর লানত করেছেন।” -সুনানে আবু দাউদ: ৩৫৮০; জামে’ তিরমিযি: ১৩৩৭

শরীয়তে ব্যবসার স্বাভাবিক নীতি হল, উন্নত গ্রাহকসেবা ও পণ্যের মান দিয়ে বাজারে প্রতিযোগিতা করা। এতে ক্রেতা-বিক্রেতা বা সেবাদাতা ও সেবাগ্রহীতা উভয়ই লাভবান হয়। স্বল্পমূল্যে উন্নত সেবার পথ সুগম হয়। তাই স্বাভাবিক প্রয়োজনের বাইরে মধ্যস্বত্বভোগীর অনুপ্রবেশকে শরীয়ত অনুৎসাহিত করে। একটি সুস্থ ও সুষম অর্থব্যবস্থায়ও তা কাম্য নয়।

তাছাড়া বর্তমান বাংলাদেশে চিকিৎসার মতো একটি মানবিক সেবা খাত যেভাবে অসহনীয় মাত্রায় ধোঁকা প্রতারণার স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে, নৈতিক বিপর্যয়ের পাশাপাশি মধ্যস্বত্বভোগীদের কমিশন বাণিজ্য তার অন্যতম কারণ। সামান্য একটু চিন্তা করলে বিষয়টি সহজেই অনুমান করা যায় যে, সাধারণ একজন গ্রাম্য ডাক্তারকেই যদি তারা ৩০%-৫০% রেফার-কমিশন দেয়, তাহলে একজন রোগী থেকে কী পরিমাণ অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়? সেবার মান ও সেবার অর্থমূল্যের ব্যবধানটা কতো আকাশ পাতাল! মধ্যস্বত্বভোগীর এই কমিশন বাণিজ্য না থাকলে, বর্তমানের চেয়ে বেশি মুনাফা করেও আরও কতো কম মূল্যে একই মানের বা আরও উন্নত মানের সেবা প্রদান করা যেতো!

এই কমিশন পদ্ধতির কারণে স্বল্পমূল্য ও সেবার মানের পরিবর্তে হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর প্রতিযোগিতার বিষয় হয়ে উঠেছে, কে কতো বেশি কমিশন দিতে পারে? ডাক্তারদের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে, কোথায় পাঠালে আমার কমিশনের অঙ্কটা মোটা হবে; রোগীর কল্যাণ অকল্যাণের চিন্তা কেউই করে না। সুপরামর্শে জন্য ডাক্তার মোটা অঙ্কের চিকিৎসা ফিও নিচ্ছেন। অথচ চিকিৎসা ফি ছাড়া পরামর্শ চাইলেও একজন মুসলিম হিসেবে সুপরামর্শ দেয়া তার দায়িত্ব ছিলো। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

مَن أشارَ على أخيه بأمرٍ يَعلمُ أنَّ الرُشْدَ في غَيرِهِ فَقَد خَانَه.

“যে ব্যক্তি তার (মুসলিম) ভাইকে কোনো পরামর্শ দিলো, অথচ সে জানে তার জন্য অন্য কিছু কল্যাণকর, সে তার সঙ্গে খেয়ানত করলো”। -সুনানে আবু দাউদ: ৩৬৫৭

এ বিষয়ে আরও জানতে ৯২ নং ফতোয়াটি দেখতে পারেন-

ওষুধ কোম্পানির পক্ষ থেকে ডাক্তারদেরকে প্রদত্ত বিভিন্ন গিফট কি ঘুষের পর্যায়ে পড়বে?

লিংক: ওষুধ কোম্পানির পক্ষ থেকে ডাক্তারদেরকে প্রদত্ত বিভিন্ন গিফট কি ঘুষের পর্যায়ে পড়বে?

فقط والله تعالى أعلم بالصواب.

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)

২১-০৪-১৪৪৬ হি.

২৪-১০-২০২৪ ঈ.

#উচ্চতর #ইসলামী #আইন #গবেষণা #বিভাগ #ফাতওয়া