.
উত্তর:
.
بسم الله الرحمن الرحيم
.
الحمد لله وسلام علي عباده الذين اصطفى أمابعد
.
সুদ জঘন্য হারাম। যারা সুদি লেন-দেন করে, তাদের সাথে আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে যু-দ্ধ ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
.
يَأَيّهَا الّذِينَ آمَنُواْ اتّقُواْ اللّهَ وَذَرُواْ مَا بَقِيَ مِنَ الرّبَا إِن كُنْتُمْ مّؤْمِنِينَ * فَإِن لّمْ تَفْعَلُواْ فَأْذَنُواْ بِحَرْبٍ مّنَ اللّهِ وَرَسُولِهِ.الآية
.
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের যে অংশ বকেয়া রয়ে গেছে, তা ছেড়ে দাও; যদি তোমরা মুমিন হও। যদি তা না করো, তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যু-দ্ধে-র ঘোষণা শুনে রাখো।” – সূরা বাকারা: ২৭৮-২৭৯
.
সুদ গ্রহীতা ও সুদ দাতা উভয়ের ওপর হাদীসে লা-ন-ত বর্ষণ করা হয়েছে। জাবির রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
.
لعن رسول الله -صلى الله عليه وسلم- آكل الربا وموكله وكاتبه وشاهديه وقال هم سواء. -رواه مسلم
.
“সুদ গ্রহীতা, সুদ দাতা, সুদি লেন-দেনের লেখক ও স্বাক্ষীদ্বয়; সকলের ওপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লানত করেছেন এবং বলেছেন, এরা সকলেই সমান।” -সহীহ মুসলিম: ১৫৯৮
.
শুধু সুদই নয়; সুদের সংশয় থেকেও বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
.
হযরত ওমর রাযি. বলেন,
.
“إن آخر ما نزلت آية الربا. وإن رسول الله صلى الله عليه وسلم قبض ولم يفسرها، فدعوا الربا والريبة”
.
“সবশেষে সুদ সংক্রান্ত আয়াতটি নাযিল হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছেন; অথচ আমাদেরকে সুদের ব্যাপারে বিস্তারিত কোনো ব্যাখ্যা দিয়ে যাননি। তাই আপনারা সুদ ও সুদের সংশয় থেকে বেঁচে থাকুন।” –সুনানে ইবনে মাজাহ: ২২৭৬, মুসনাদে আহমাদ: ২৪৬। হাদীসটি সহীহ।
.
আর একারণেই ফুকাহায়ে কেরাম অনেক মাসআলায় নাজায়েয ফতোয়া দিয়েছেন, সুদের কারণে নয়; বরং সুদের সংশয় থাকার কারণে। ফিকহের কিতাবাদি যাদের কম-বেশ পড়া আছে, তাদের কারও বিষয়টি অজানা নয়।
.
এরকম আরও অনেক দলীলের ভিত্তিতে হানাফী মাযহাবের ইমাম আবু ইউসুফ রহ.-সহ অন্য সকল মাযহাবের ফুকাহায়ে কেরামের মতে সুদি চুক্তি ও সুদের লেনদেন সর্বাবস্থায় হারাম এবং তা সুদ হিসেবে গণ্য; চাই তা দারুল হা-র-বে হোক কিংবা দারুল ইসলামে হোক। মুসলিমদের পরস্পরে হোক কিংবা হা-র-বী-দে-র সঙ্গে হোক।
.
একইভাবে মুসলিম ব্যক্তি কাউকেই সুদ দিতে পারবে না; চাই সে মুসলিম হোক বা হারবী, এ বিষয়ে হানাফী মাযহাবের সকল ইমামও অন্য মাযহাবের ইমামদের সঙ্গে একমত।
.
হ্যাঁ, ইমাম আবু হানীফা রহ. এবং ইমাম মুহাম্মাদ রহ. এর মতে, বিশেষ কিছু শর্ত সাপেক্ষে মুসলিম ব্যক্তি যদি হা-র-বী কা-ফে-র থেকে সুদ গ্রহণ করে, তাহলে তাঁদের দৃষ্টিতে তা সুদ হিসেবে গণ্য হয় না বিধায় একজন মুসলিমের জন্য তাঁরা তা হালাল মনে করেন। তাঁদের এই মতের ভিত্তিও কিছু দলীলের ওপর; যদিও সেই দলীল জুমহুর (অধিকাংশ) ফুকাহায়ে কেরামের দৃষ্টিতে তুলনামূলক বিশ্লেষণে অগ্রগণ্য নয়। ইমামদ্বয়ের এই মতটিকে ভিত্তি করেই অনেকে ঢালাওভাবে বলে দেন, দারুল হা-র-বে কিংবা হা-র-বী-দে-র সঙ্গে সুদি কারবার জায়েয। কিন্তু বাস্তবে বিষয়টি আদৌ এমন নয়। দুই ইমামের দৃষ্টিতেও বিষয়টি এত ব্যাপক ও শর্তহীন নয়।
.
অধিকন্তু ইমামদ্বয়ের এই বক্তব্যকে জুমহুর ফুকাহায়ে কেরাম দলীলের আলোকে বেশ শক্তভাবে খণ্ডন করেছেন এবং পরবর্তী হানাফী ফুকাহায়ে কেরামও তাঁদের এই বক্তব্যের মোকাবেলায় ইমাম আবু ইউসুফর রহ. ও জুমহুর ফুকাহায়ে কেরামের মতকে প্রাধান্য দিয়েছেন এবং এর ওপরই ফতোয়া প্রদান করেছেন। আকাবিরে দেওবন্দের মধ্যে ফকীহুন নফস হযরত রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী রহ., হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভী রহ., দারুল উলূম দেওবন্দের সদর মুফতী মাওলানা আজীজুর রহমান রহ., পাকিস্তানের সাবেক মুফতীয়ে আজম মুফতী শফী রহ., শায়খুল ইসলাম তাকী উসমানী হাফিযাহুল্লাহ প্রমূখের মতো উপমহাদেশের বিদগ্ধ মুফতীয়ানে কেরামের ফতোয়াও জুমহুর উলামায়ে কেরামের মতের ওপর। তাঁদের সকলের মতেই সুদি কারবার দারুল ইসলামে এবং মুসলিমদের সঙ্গে যেমন নাজায়েয, তেমনি দারুল হারবে এবং হারবীদের সঙ্গেও নাজায়েয।
.
পরবর্তীদের কিছু ফতোয়া লক্ষ করুন!
.
মুফতী শফী রহ. বলেন,
.
سود لينا كسي سے جائز نهيں مسلمان هو يا هندو-احتياطي فتوى يهي هے، اگر چه بعض علماء كا اس ميں اختلاف هے كيونكه حديث وقرآن ميں اس كي وعيديں اس قدر سخت آئي هيں كه سود كے شبه سے بھي بچنا ضروري معلوم هوتا هے –إمداد المفتين، ص: 743
.
“মুসলিম বা হিন্দু কারও থেকেই সুদ নেওয়া জায়েয নয়। এটাই সতর্কতামূলক ফতোয়া। যদিও কিছু আলেমের এ ক্ষেত্রে ভিন্নমত আছে। কেননা কুরআন-হাদীসে সুদের ব্যাপারে এতো বেশি ধমকি এসেছে যে, সুদের সংশয় থেকেও বেঁচে থাকা জরুরি মনে হয়।” -ইমদাদুল মুফতীন, পৃ: ৭৪৩
.
জামিয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়া বিন্নুরি টাউনের একটি ফতোয়ায় এসেছে,
.
ہندوستان میں سود کے لین دین کا حکم
سوال
1.ہندوستان دارالحرب ہے؟
2.بریلوی علماء دارالحرب میں سودی لین کو جائز، حلال کہتے ہیں ؛ کیوں کہ فقہِ حنفی میں دارالحرب میں سودی لین کے جائز ہونے کا قول ملتا ہے؟
3.بریلوی علماء انشورنس کمپنی اور بینک کی نوکری کو حلال کہتے ہیں؛ کیوں کہ فقہ احناف کی کتابوں میں غیر اسلامی ملکوں میں (سودی پیسوں کے بینک) میں نوکری کو حلال کہا گیا ہے ؟
جب کہ دیوبندی علماء اس کی مخالفت کرتے ہیں۔ عندالاحناف اس اختلاف میں کون صحیح ہے؟
جواب
اس بحث سے قطع نظر کہ ہندوستان دارالحرب ہے یا نہیں، آپ کے مطلوبہ مسائل کے جوابات درج ذیل ہیں:
۱) دار الحرب میں کافر حربی سے سود کے جائز ہونے یا نہ ہونے میں فقہاء کرام کے درمیان اختلاف ہے، احناف میں سے امام ابو یوسف رحمہ اللہ دارالحرب میں کافر حربی سے سود ی معاملے کو مطلقاً ناجائز کہتے ہیں، ان کا مستدل وہ نصوص ہیں جن میں سود کو مطلقاً حرام قراردیا گیاہے، البتہ حنفیہ میں سے امام ابو حنیفہ اور امام محمد رحمہما اللہ دارالحرب میں کافر حربی سے سود کو ایک غریب حدیث ” لاربا بین المسلم والحربی” کی بنیاد پر چند قیود کے ساتھ جائز کہتے ہیں۔ لیکن چوں کہ معاملہ سود کا ہے جس کی حرمت قرآنی آیات میں بغیر کسی قید کے منصوص ہے ؛ اس لیے حنفیہ کے یہاں جمہور کے مسلک (یعنی حرمت والے قول کو ) ترجیح حاصل ہے اور اسی پر فتویٰ ہے، طرفین کے مسلک (یعنی جواز کے قول) کو مرجوح قرار دیا گیا ہے۔ تفصیل کے لیے امداد الفتاوی ،( ج: ۳، ص: ۱۱۷) رسالہ بعنوان:” تحذیر الاخوان عن الربا فی الھندوستان” اور فتاوی بینات، (ج: ۴، ص: ۹۵ تا ۱۰۰ ) کتاب المعاملات ملاحظہ فرمائیں۔
۲) اسی طرح غیر اسلامی ملکوں میں بھی اسلامی ملکوں کی طرح انشورنس کمپنی اور بینک کی نوکری حلال نہیں ہے؛ اس لیے کہ عمومی نصوص حرمت پر دال ہیں۔ نیز فقہاء نے قاعدہ لکھا ہے کہ: اگر کہیں حلت وحرمت میں علماء کا اختلاف ہوجائے تو ترجیح حرمت والے قول کو ہوگی۔
الفروق للقرافی میں ہے:
فان اختلف العلماء فی فعل هل هو مباح او حرام فالورع الترک.
– الفرق السادس والعشرون والمئتان من الفروق، ج: ۴، ص: ۲۷۔ ط:عالم الکتب
الاشباہ والنظائر میں ہے:
القاعدة الثانية: إذا تعارض دليلان أحدهما يقتضي التحريم، والآخر الإباحة قدم التحريم،فقط واللہ اعلم- الأشباه والنظائر لابن نجيم (ص: 93)
فتوی نمبر : 143902200090
دارالافتاء : جامعہ علوم اسلامیہ علامہ محمد یوسف بنوری ٹاؤن
.
“………দারুল হা-র-বে হা-র-বী থেকে সুদ জায়েয হওয়ার বিষয়ে ফুকাহায়ে কেরামের মাঝে মতভেদ রয়েছে। হানাফীদের মধ্যে ইমাম আবু ইউসুফ রহ. দা-রু-ল হা-র-বে, হা-র-বী কাফেরের সঙ্গে সুদি কারবার সর্বাবস্থায় নাজায়েয বলেন। তাঁর দলীল ওই সব আয়াত ও হাদীস, যেগুলোতে সুদকে শর্তহীন ভাবে হারাম সাব্যস্ত করা হয়েছে। অবশ্য ইমাম আবু হানীফা ও ইমাম মুহাম্মাদ রহ. দা-রু-ল হা-র-বে হা-র-বী কা-ফে-র থেকে সুদ গ্রহণের বিষয়টি একটি ‘গারীব’ হাদীসের ভিত্তিতে কিছু শর্ত সাপেক্ষে জায়েয বলেন। কিন্তু বিষয়টি যেহেতু সুদের, যা কুরআনে কারীমে দ্ব্যর্থহীন ও সুস্পষ্টভাবে নিঃশর্ত হারাম সাব্যস্ত করা হয়েছে, এজন্য এখানে হানাফীদের কাছে জুমহুরের মতটি অগ্রগণ্য এবং জুমহুরের মতের ওপরই ফতোয়া।……” –ফতোয়া নং ১৪৩৯০২২০০০৯০
.
শাইখুল ইসলাম মুফতী তাকী উসমানী হাফিযাহুল্লাহ বলেন,
.
أما البنوك التي يملكها غير المسلمين في البلاد غير المسلمة فقد ذهب العلماء المعاصرين إلى جواز الإيداع فيها والانتفاع بالفوائد الحاصلة منها على أساس قول الإمام أبي حنيفة رحمه الله من أنه يجوز أخذ مال الحربي برضاه وأنه لا ربا بين المسلم والحربي. وإن هذا القول لم يقبله جمهور الفقهاء حتى إنه لم يفت به الفقهاء المتأخرون منهم الحنفية. وبما أن حرمة الربا منصوص عليها بنص قطعي يؤذن بحرب من الله ورسوله لمن لا يتركه، فلا ينبغي في عموم الأحوال أن يدخل المسلم في معاملة الربا. -بحوث في قضايا فقهية معاصرة (ص: 359)
.
“অমুসলিমদের মালিকানাধীন ব্যাংকে আমানত রেখে সুদ গ্রহণ করাকে সমকালীন আলেমগণ আবু হানীফা রহ. এর মতের ভিত্তিতে বৈধ বলেছেন, … তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ ফকিহ এই মত গ্রহণ করেননি। এমনকি পরবর্তী হানাফী ফকিহগণও এই মত অনুযায়ী ফাতোয়া দেননি। যেহেতু সুদ হারাম হওয়ার বিষয়টি (কু