উত্তরঃ
.
بسم الله الرحمن الرحيم
.
কোনো বিবাহিত নারী বা পুরুষের যিনার ‘হ-দ’ তথা শ-রী-য়-ত নির্ধারিত শা'স্তি হচ্ছে, ‘র-জ-ম’ বা পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করা। এটা শ-রী-য়-তে-র সুস্পষ্ট ও সর্বসম্মত বিধান। হাদীসে এসেছে,
.
قَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ وَهُوَ جَالِسٌ عَلَى مِنْبَرِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: “إِنَّ اللهَ قَدْ بَعَثَ مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْحَقِّ، وَأَنْزَلَ عَلَيْهِ الْكِتَابَ، فَكَانَ مِمَّا أُنْزِلَ عَلَيْهِ آيَةُ الرَّجْمِ، قَرَأْنَاهَا وَوَعَيْنَاهَا وَعَقَلْنَاهَا، فَرَجَمَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَرَجَمْنَا بَعْدَهُ، فَأَخْشَى إِنْ طَالَ بِالنَّاسِ زَمَانٌ أَنْ يَقُولَ قَائِلٌ: مَا نَجِدُ الرَّجْمَ فِي كِتَابِ اللهِ فَيَضِلُّوا بِتَرْكِ فَرِيضَةٍ أَنْزَلَهَا اللهُ، وَإِنَّ الرَّجْمَ فِي كِتَابِ اللهِ حَقٌّ عَلَى مَنْ زَنَى إِذَا أَحْصَنَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ، إِذَا قَامَتِ الْبَيِّنَةُ، أَوْ كَانَ الْحَبَلُ، أَوِ الِاعْتِرَافُ “. –صحيح البخاري (8/168 رقم الحديث: 6829 ط. دار طوق النجاة) صحيح مسلم: (3/ 1317 رقم الحديث: 1691 دار إحياء التراث العربي – بيروت) وقال الحافظ في “فتح الباري” لابن حجر (12/ 148 ط. دار الفكر) “قوله: “والرجم في كتاب الله حق” أي في قوله تعالى:{أو يجعل الله لهن سبيلا} فبين النبي صلى الله عليه وسلم أن المراد به رجم الثيب وجلد البكر“.
.
“উমর ইবনুল খাত্তাব রাযি. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিম্বরে বসা অবস্থায় বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সত্য (দ্বীন) দিয়ে প্রেরণ করেছেন এবং তাঁর উপর কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। আল্লাহর নাযিলকৃত বিষয়ের মধ্যে র-জ-মে-র আয়াত রয়েছে। আমরা সে আয়াত পড়েছি, স্মরণ রেখেছি এবং হৃদয়ঙ্গম করেছি। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র-জ-ম করেছেন। তাঁর পরে আমরাও র-জ-ম করেছি। আমি আশঙ্কা করছি, দীর্ঘকাল অতিবাহিত হওয়ার পর কোনো ব্যক্তি একথা বলবে, ‘আল্লাহর কসম! আমরা তো আল্লাহর কিতাবে র-জ-মের আয়াত পাচ্ছি না।’ ফলে তারা এমন একটি ফরয বর্জনের দরুন পথভ্রষ্ট হবে, যা আল্লাহ অবতীর্ণ করেছেন। নিশ্চয়ই র-জ-ম আল্লাহর কিতাবে রয়েছে এবং তা সত্য। তা ওই ব্যক্তির উপর অবধারিত, যে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর যিনা করবে, চাই সে পুরুষ হোক বা নারী; যখন সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যাবে অথবা গর্ভ বা স্বীকারোক্তি বিদ্যমান থাকবে।” –সহীহ বুখারী: ৬৮২৯; সহীহ মুসলিম: ১৬৯১;
.
আরও দেখুন, শরহু মুসলিম: ১১/১৯২ দারু ইহইয়ায়িত তুরাসিল আরাবী; কিতাবুল আসল: ৭/১৪৩ দারু ইবনি হাযম, বৈরুত; আল-মাবসূত: ৯/৩৬ দারুল মারেফা, বৈরুত; আহকামুল কুরআন লিল জাসসাস: ৫/৯৭ দারু ইহইয়াউত তুরাসিল আরাবী; আল-বাহরুর রায়িক: ৫/০৮ দারুল কিতাবিল ইসলামী; আল-ফাতাওয়াল হিন্দিয়া: ২/১৪৫; রদ্দুল মুহতার: ৪/১০ দারুল ফিকর, বৈরুত
.
তবে উলামায়ে কেরামের মতে এই বিধান কার্যকর করার অধিকার একমাত্র রাষ্ট্রের।
.
ইমাম ইবনে রুশদ আল-হাফিদ রহ. (৫৯৫ হি.) বলেন,
.
وأما من يقيم هذا الحد فاتفقوا على أن الإمام يقيمه، وكذلك الأمر في سائر الحدود. -بداية المجتهد ونهاية المقتصد (4/ 228)‘ دار الحديث – القاهرة ‘الطبعة: بدون طبعة
.
“এই (মদপানের) হ-দ কে বাস্তবায়ন করবে, এই ব্যাপারে কথা হচ্ছে, সকলে একমত যে, (এই) হ-দ ইমাম (তথা রাষ্ট্রপ্রধান) বাস্তবায়ন করবেন। (অন্য) সকল হ-দ বাস্তাবায়নের বিষয়েও একই কথা।” -বিদায়াতুল মুজতাহিদ: ৪/২২৮ দারুল হাদীস, কায়রো
.
আরও দেখুন, আল-মুসান্নাফ, ইবনু আবি শাইবাহ: ৬/৪৭৬ হাদীস নং: ১০২৯৭; আহকামুল কুরআন লিল জাসসাস: ৫/৯৯ দারু ইহইয়ায়িত তুরাসিল আরাবী; আল-ইখতিয়ার: ৪/৮৭ মাতবাআতুল হালাবী, কায়রো; ইলাউস সুনান: ৯/৪৫০০ দারুল ফিকর, বৈরুত; আল-বাহরুর রায়িক: ৫/১০ দারুল কিতাবিল ইসলামী; আল-হিদায়া: ২/৩৪২ দারু ইহইয়াউত তুরাসিল আরাবী; ফাতহুল কাদীর: ৫/২৩৫ দারুল ফিকর; বাদায়িউস সানায়ে: ৯/২২৬ দারুল হাদীস কায়রো; তাবয়ীনুল হাকায়িক: ৩/১৭১ আল-মাতবাআতুল কুবরা, আল-আমিরিয়্যাহ, বোলাক, মিসর; বিদায়াতুল মুজতাহিদ: ৪/২২৮ দারুল হাদীস, কায়রো; আত-তাফসীরুল কাবীর, ইমাম রাযী: ১১/৩৫২ দারু ইহইয়ায়িত তুরাসিল আরাবী; তাফসীরুল কুরতুবী: ১২/১৬১ দারুল কুতুবিল মিসরিয়্যাহ; মাওসুওয়াতুল ইজমা: ৯/২৪৮ দারুল ফযিলাহ, সৌদি; মাওসুওয়াহ ফিকহিয়্যাহ কুয়েতিয়্যাহ: ৫/২৮০ ও ১৪/৭২ ওযারাতুল আওকাফ, কুয়েত
.
অবশ্য কোনো কোনো আলেম বলেছেন, যখন রাষ্ট্রপ্রধান অবহেলাবশত শ-রী-য়-তে-র বিধান প্রতিষ্ঠা করবেন না কিংবা দারুল ইসলামে একক কোনো ইমাম বা সুলতান বিদ্যমান থাকবে না; বরং মুসলিমরা ইমাম ও সুলতানবিহীন খণ্ড খণ্ড বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে পড়বে, তখন যদি মুসলিম সমাজের উলামা-সুলাহাদের তা বাস্তবায়ন করার এবং নিয়ন্ত্রণ করার সক্ষমতা থাকে, তাহলে তারাও এই বিধান কার্যকর করতে পারবে। ইমাম ইবনুল ফারাস মালেকী রহ. (৫৯৭ হি.) বলেন,
.
وإذا لم يكن إمام فالظاهر من المذهب أن الرعية لا تقيم الحدود. وذكر أبو الحسن أنه إن أفضى إقامة الحدود من صلحاء الناس إلى هرج وفتنة لم يجز وإن لم يفض جاز.- أحكام القرآن لابن الفرس (3/ 329) دار ابن حزم، بيروت، الطبعة: الأولى، 1427 هـ – 2006 م
.
“মাযহাবের (আলেমদের বক্তব্য) থেকে বুঝে আসে, ইমাম না থাকলে জনগণের জন্যে হ-দ বাস্তবায়নের অনুমতি নেই। তবে আবুল হাসান রহ. বলেছেন, যদি সমাজের সৎ লোকেরা হ-দ প্রতিষ্ঠা করলে ফিতনা-ফাসাদ হয় তাহলে তা জায়েয নয়; পক্ষান্তরে ফিতনা-ফাসাদ না হলে, তাদের জন্য হ-দ প্রতিষ্ঠা করা জায়েয।” -আহকামুল কুরআন লি ইবনিল ফারাস: ৩/৩২৯; আরও দেখুন, মাজমুউল ফাতাওয়া: ৩৪/১৭৬, মাজমাউল মালিক, ফাহাদ
.
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন,
.
وكذلك لو شاركوا الإمارة وصاروا أحزابا لوجب على كل حزب فعل ذلك في أهل طاعتهم فهذا عند تفرق الأمراء وتعددهم وكذلك لو لم يتفرقوا؛ لكن طاعتهم للأمير الكبير ليست طاعة تامة؛ فإن ذلك أيضا إذا أسقط عنه إلزامهم بذلك لم يسقط عنهم القيام بذلك؛ بل عليهم أن يقيموا ذلك؛ وكذلك لو فرض عجز بعض الأمراء عن إقامة الحدود والحقوق أو إضاعته لذلك: لكان ذلك الفرض على القادر عليه. وقول من قال: لا يقيم الحدود إلا السلطان ونوابه. إذا كانوا قادرين فاعلين بالعدل. كما يقول الفقهاء: الأمر إلى الحاكم إنما هو العادل القادر فإذا كان مضيعا لأموال اليتامى؛ أو عاجزا عنها: لم يجب تسليمها إليه مع إمكان حفظها بدونه وكذلك الأمير إذا كان مضيعا للحدود أو عاجزا عنها لم يجب تفويضها إليه مع إمكان إقامتها بدونه. والأصل أن هذه الواجبات تقام على أحسن الوجوه. فمتى أمكن إقامتها من أمير لم يحتج إلى اثنين ومتى لم يقم إلا بعدد ومن غير سلطان أقيمت إذا لم يكن في إقامتها فساد يزيد على إضاعتها فإنها من ” باب الأمر بالمعروف والنهي عن المنكر ” فإن كان في ذلك من فساد ولاة الأمر أو الرعية ما يزيد على إضاعتها لم يدفع فساد بأفسد منه. والله أعلم. – مجموع الفتاوى (34/ 176) مجمع الملك فهد لطباعة المصحف الشريف، المدينة النبوية، المملكة العربية السعودية عام النشر: 1416هـ/1995م
.
এমনিভাবে (একক কোনো নেতৃত্ব না থেকে) নেতৃত্বে যখন বহুজন অংশীদার থাকে এবং নেতৃস্থানীয়রা বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়ে, তাহলে প্রত্যেক দলের উপর আবশ্যক, স্ব-স্ব অনুসারীদের মধ্যে তা (হু-দু-দ) বাস্তবায়ন করা। এটি হচ্ছে তখনকার বিধান, যখন আমীর একাধিক হবে এবং তারা পরস্পর দ্বিধাবিভক্ত থাকবে।
.
একইভাবে যদি তারা পরস্পর দ্বিধাবিভক্ত না-ও হয়, কিন্তু প্রধান আমীরের প্রতি তাদের পূর্ণ আনুগত্য নেই, তাহলে এক্ষেত্রে জনসাধারণের উপর জবরদস্তি তা বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব হতে আমীর যদিও অব্যাহতি পাবেন, কিন্তু জনসাধারণের উপর থেকে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব মওকুফ হবে না; বরং তাদের জন্য আবশ্যক তা বাস্তবায়ন করা।
.
তেমনিভাবে যদি কোনো আমীর হু-দু-দ বাস্তবায়ন ও (জনসাধারণের প্রাপ্য) অধিকার নিশ্চিত করতে অক্ষম হয়ে পড়েন কিংবা ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তা না করেন, তাহলেও সক্ষমদের উপর এই ফরয বাস্তবায়নের দায়িত্ব বর্তাবে।
.
আর ইমামদের মধ্যে যারা বলেছেন, ‘সুলতান এবং তাঁর নায়েব ছাড়া অন্য কেউ হু-দু-দ কায়েম করতে পারবে না’ তা ওই সময় প্রযোজ্য, যখন তাঁরা তা বাস্তবায়নে সক্ষম এবং ইনসাফের সাথে তা করছেনও। যেমন ফুকাহায়ে কেরাম (কোনো কোনো ক্ষেত্রে) বলে থাকেন, ‘এই বিষয়ের দায়িত্ব শাসকের’ কথাটি এমন শাসকের জন্য, যিনি ন্যায়বান ও বাস্তবায়নে সক্ষম। পক্ষান্তরে তিনি যদি ইয়াতীমদের সম্পদ বিনষ্টকারী হন কিংবা তা সংরক্ষণে অক্ষম হন, তাহলে তার মাধ্যম ছাড়াই সংরক্ষণ করা সম্ভব হলে ওই সম্পদ তার হাতে সমর্পণ করা আবশ্যক নয়। একইভাবে আমীর যদি হু-দু-দ বিনষ্টকারী হন (তথা সক্ষমতা সত্ত্বেও বাস্তবায়ন না করেন) কিংবা তা বাস্তবায়নে অক্ষম হন, তাহলে তার মাধ্যম ছাড়াই তা বাস্তবায়ন সম্ভব হলে তার নিকট তা ন্যস্ত করা আবশ্যক নয়।
.
(এক্ষেত্রে শ-রী-য়-তে-র) মূলনীতি হল, এসব ফরয বিধান বাস্তবায়ন করতে হবে সম্ভাব্য সর্বোত্তম পন্থায়। সুতরাং যখন তা এক আমীর দিয়ে বাস্তবায়ন সম্ভব হয় তখন দুজনের প্রয়োজন নেই। আর যখন সুলতানের বাহির থেকে এবং একাধিক আমীর ছাড়া তা বাস্তবায়ন সম্ভব না হয়, তখন বাস্তবায়ন করতে গেলে যে ফিতনা হবে তা যদি বাস্তবায়