অমুসলিমদের খাবার বা হাদিয়া গ্রহণ ও প্রদান সম্পর্কে জরুরী মাসআলা

১. সাধারণ অবস্থায় বা বিশেষ কোনো কারণে, যেমন প্রতিবেশী হওয়া, সন্তান জন্ম লাভ করা, পরীক্ষায় পাস করা, ভালো চাকরি পাওয়া, বিবাহ উপলক্ষে এ জাতীয় কারণে অমুসলিমদের পক্ষ থেকে পাঠানো খাবার বা হাদিয়া গ্রহণ করা কিংবা তাদের দাওয়াত গ্রহণ করা জায়েয।

তবে শর্ত হচ্ছে, নিজের দীন-ধর্মের কোন ক্ষতি না হতে হবে এবং তা হারাম ও অপবিত্র বস্তু হতে পারবে না, যেমন তাদের জবাইকৃত পশুর গোশত ও মদ অথবা খাবারে কোন নাপাকি বা মুসলমানদের জন্য হারাম এমন কোন জিনিস মিশ্রিত থাকা।

২. প্রতিবেশী বা আত্মীয়তার কারণে কিংবা ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য অথবা বৈধ কোন প্রয়োজনে অমুসলিমদেরকে হাদিয়া প্রদান বা দাওয়াত দেওয়া জায়েয।

৩. অমুসলিমদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও উৎসব উপলক্ষে যদি কোন খাবার বা হাদিয়া আসে, আর তা যদি
দেবদেবি বা মুর্তির নামে উৎসর্গ করা হয়, যেমন প্রসাদ বা মিষ্টান্ন কিংবা ফলমুল, এমনকি পানি হোক না কেন, তা হারাম। সেই খাবার খাওয়া বা হাদিয়া গ্রহণ করা বৈধ নয়। এভাবে কোনো মুর্খ মুসলিম যদি তা ওলি-আউলিয়াদের নামে করে, তাও হারাম।

বলাবাহুল্য, উৎসর্গকৃত বস্তু প্রাণী হতে হবে না, বরং যে কোন কিছু হলেই হবে। কাজেই প্রসাদ বা প্রাণী জাতীয় বস্তু হারাম, তবে মিষ্টান্ন বা ফলমূল হারাম নয়- এ ধরনের কথায় বিভ্রান্ত হবেন না।

৪. কারো নামে উৎসর্গকৃত নয় এমন হালাল ও পবিত্র খাবার বা হাদিয়া যদি অমুসলিমদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও উৎসব উপলক্ষে আসে অথবা বিধর্মী কোন মালিক তার কাছে চাকরিরত মুসলিমদের যদি এই উপলক্ষে কিছু দেয়, তা গ্রহণ করা নিরাপদ নয়। হযরত আলী রাযি. ও ওমর বিন আব্দুল আজিজ রহ. তা গ্রহণ করতেন না। বর্তমানে এর উপরই আমল করা উচিত।

তবে কারো কারো মতে তা গ্রহণ করার সুযোগ আছে। শর্ত হচ্ছে, নিজের দীন-ধর্মের ক্ষতি না হতে হবে এবং প্রায় প্রতি উৎসবে তা হতে পারবে না, বরং প্রয়োজনে বা ঠেকায় পড়ে যদি দুই একবার গ্রহণ করতে হয়, তাহলে বৈধ। যেখানে ফিকহের কিতাবে মুশরিক-
বিধর্মীদের সাথে প্রয়োজনে দুই একবার ছাড়া একসাথে খানা খেতে নিষেধ করা হয়েছে, সেখানে তাদের প্রায় প্রতি উৎসবে তাদের কাছ থেকে কিছু খাওয়া কীভাবে বৈধ হতে পারে? তাছাড়া এটা তো ঈমানী গায়রতেরও প্রশ্ন!

কাজেই তাদের কাছ থেকে প্রায় প্রতি পূজায় নারকেলের নাড়ু আর খইভাজা বা অন্য কিছু খাওয়া জায়েয নয়।

৫. কারো নামে উৎসর্গকৃত নয় এমন হালাল ও পবিত্র খাবার বা হাদিয়া যদি অমুসলিমদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও উৎসব উপলক্ষে তারা এটা মনে করে দেয় যে, পরস্পরে আনন্দ ভাগাভাগি করা বা মুসলমানরাও আমাদের এই উৎসবে অংশীদার অথবা এটা তাদের উপর আমাদের অনুগ্রহ, তখন উক্ত খাবার বা হাদিয়া গ্রহণ করা নাজায়েয।

৬. কোন মুসলিমের জন্য অমুসলিমদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও উৎসব উপলক্ষে তাদেরকে কিছু দেয়া হারাম। সুতরাং পূজার জন্য টাকা বা অন্য কিছু দেওয়া জায়েয নয়।

৭. অমুসলিমদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও উৎসব উপলক্ষে তাদের মতো উক্ত অনুষ্ঠান ও উৎসবকে সম্মান মনে করে তাদেরকে কিছু দেয়া কুফরী। ইমাম আবু হাফস কাবীর রাহ. বলেন, কেউ যদি ৫০ বছর ইবাদত করেছে, এরপর কোন মুশরিককে তার উৎসবের দিনকে সম্মান করে একটা ডিম হাদিয়া দিল, তাহলে সে কাফের হয়ে যাবে এবং তার সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে।

৮. অমুসলিমদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও উৎসব উপলক্ষে যদি এক মুসলিম অন্য মুসলিমকে কিছু দেয়, আর এতে যদি অমুসলিমদের মতো উক্ত অনুষ্ঠান ও উৎসবের সম্মান মনে করে দেয়, তাহলে কুফরী হবে।

মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ২৪৮৫৬, ২৪৮৫৭, ৩৩৩৮৯; আত-তারিখুল কাবীর, ইমাম বুখারী হা. ১৩১৯; আস-সুনানুল কুবরা, বায়হাকী ১৮৮৬৫; আল-খারাজ, ইমাম আবু ইউসুফ পৃ. ৯৯; আস-সিয়ারুল কাবীর, ইমাম মুহাম্মাদ ১/১৪৬; আল-মাবসূত, সারাখসী ২৪/৫০; আল-মুহিতুল বুরহানি ৫/৩৬২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৭/৩৪৮; ফাতাওয়া বায্যাযিয়্যা ১২/১৮৬; ফাতাওয়া শামী ১০/৪৮৫-৮৬, যাকারিয়া; ফাতাওয়া আলমগীরী ৫/৩৪৭; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৮/৫৬৩, ৯/৪২৯-৩০; ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ১৮/১৭৫ ; আহসানুল ফাতাওয়া ৮/১৬২; ফাতাওয়া কাসেমিয়া ২৪/২৪৮ ও মাআরিফুল কুরআন, মুফতি শফী ১/৪২৪।

প্রকাশিতব্য "আপনার ঈমান-আকীদা" বই থেকে।

শাইখ Sayed Ahmad হাফি.