তা-গু-ত বাহিনীর যুদ্ধরত মুসলিম সৈন্যকে হ-ত্যার বিধান
প্রশ্ন:
আমার জানা মতে তা-গু-তের সেনাবাহিনীর মধ্যে কেউ যদি কা-ফে-র থাকে, তাকে হ-ত্যা করে তার কাছে থাকা রাইফেল কেড়ে নেয়া যাবে। তবে কোনো মুসলিমকে হ-ত্যা করা তো খা*রে*জিদের কাজ। বাংলাদেশের তা-গু-ত সেনাবাহিনীর মধ্যে অধিকাংশ মুসলিম না জেনে মু-জা-হি-দদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাদের মধ্যে অনেকেই এমন আছে, যারা আল্লাহকে ভয় করে। কিন্তু অজ্ঞতার কারণে কিংবা তা-গু-তের প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে সে মু-জা-হি-দদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে।
আমার মূল প্রশ্ন হল, তা-গু-তের বাহিনীর কোনো মুসলিম সেনা আমার উপর আক্রমণ করলে, তাকে পাল্টা আক্রমণ করা জায়েয হবে কি না? তার থেকে হাতিয়ার ছিনিয়ে নেওয়া জায়েয হবে কি না?
-মাহির সোভন
উত্তর:
বর্তমান তা-গু-ত সরকার ও তার বাহিনী আন্তর্জাতিক কু-ফ-রি শক্তি এবং কু-ফ-রি বিশ্ব ব্যবস্থার পক্ষে ইসলাম, মুসলিম ও মু-জা-হি-দদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত। এযু-দ্ধে কোনো মুসলিমও যদি তাদের সঙ্গে যোগ দেয়, তাহলে তার সঙ্গে কি-তা-ল করা, তাকে হ-ত্যা করা, তার অস্ত্রশস্ত্র ছিনিয়ে নেয়া সবই জায়েয।[1] – সূরা নিসা: (৪) ৯৭; শারহুস সিয়ার, পৃ: ২২৬৩ (আশ-শারিকাতুশ শারকিয়্যাহ); রদ্দুল মুহতার: ৬/৫৩৭ (দারুল ফিকর, বৈরুত); সহীহ বুখারী: ৩:৬৫, ৬/৪৮ হাদীস নং: ২১১৮, ৪৫৯৬ (দারু তাইয়িবাহ) সহীহ মুসলিম: ৪/২২১০ হাদীস নং: ২৮৮৩ (দারু ইহয়াউত তুরাস); শারহুন নববী আলা মুসলিম: ১৮/৭ (দারু ইহয়াউত তুরাস); ফাতহুল বারী: ১৩/৩৮ (দারুল ফিকর); আস-সিয়াসাতুশ শরইয়্যাহ, পৃ: ৬৭ (ওযারাতুল আওকাফ, সৌদি); মুন্তাদাল আসয়িলাহ, মিম্বারুত তাওহীদ ওয়াল জিহাদ, প্রশ্ন নং: ৫৮৬৮
হেদায়া গ্রন্থকার ইমাম মারগিনানী রহিমাহুল্লাহ (৫৯৩ হি.) বলেন,
قال: “وإذا التقى الصفان من المسلمين والمشركين فقتل مسلم مسلما ظن أنه مشرك فلا قود عليه وعليه الكفارة”؛ … وكذا الدية على ما نطق به نص الكتاب ولما اختلفت سيوف المسلمين على اليمان أبي حذيفة قضى رسول الله عليه الصلاة والسلام بالدية قالوا: إنما تجب الدية إذا كانوا مختلطين، فإن كان في صف المشركين لا تجب لسقوط عصمته بتكثير سوادهم قال عليه الصلاة والسلام: “من كثر سواد قوم فهو منهم”. –الهداية في شرح بداية المبتدي (4/447 دار احياء التراث العربي – بيروت – لبنان)
“মুসলিম ও মু-শ-রি-কদের দুটি দল পরস্পর যু-দ্ধে লিপ্ত অবস্থায় কোনো মুসলিম মু-শ-রি-ক মনে করে অপর মুসলিমকে হ-ত্যা করলে তার উপর কিসাস আসবে না। তবে তাকে কাফফারা ও দিয়ত দিতে হবে, যেমনটা পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে। (উহুদ যু-দ্ধের দিন) হুযাইফা রাযিয়াল্লাহু আনহুর পিতা ইয়ামানকে (না চেনার কারণে) মুসলিমরা চতুর্দিক থেকে তরবারীর আঘাতে হ-ত্যা করে ফেললে রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিয়তের ফায়সালা দেন। মাশায়েখগণ বলেছেন, দিয়ত ওয়াজিব হবে যদি মুসলিম-কা-ফে-র সবাই মিশ্রিত হয়। কিন্তু যদি কোনো মুসলিম মু-শ-রি-কদের কাতারে থাকে, তাহলে দিয়তও ওয়াজিব হবে না। কেননা মু-শ-রি-কদের দল ভারী করার দ্বারা তার জানের নিরাপত্তা নিঃশেষ হয়ে গেছে।” –আল-হিদায়াহ: ৪/৪৪৭ (দারু ইহয়ায়িত তুরাস)
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ রহিমাহুল্লাহ (৭২৮ হি.) বলেন,
إن هذه العصابة التي بالشام ومصر في هذا الوقت هم كتيبة الإسلام وعزهم عز الإسلام وذلهم ذل الإسلام. فلو استولى عليهم التتار لم يبق للإسلام عز ولا كلمة عالية ولا طائفة ظاهرة عالية يخافها أهل الأرض تقاتل منه. فمن قفز عنهم إلى التتار كان أحق بالقتال من كثير من التتار؛ فإن التتار فيهم المكره وغير المكره … فإنه لا ينضم إليهم طوعا من المظهرين للإسلام إلا منافق أو زنديق أو فاسق فاجر. ومن أخرجوه معهم مكرها فإنه يبعث على نيته. ونحن علينا أن نقاتل العسكر جميعه. -مجموع الفتاوى (28/534 ط. مجمع الملك فهد لطباعة المصحف الشريف، المدينة النبوية: 1416هـ)
“বর্তমানে শাম ও মিসরের এই দলটিই ইসলামের সেনাবাহিনী। তাদের মর্যাদাই ইসলামের মর্যাদা, তাদের পরাজয় ইসলামের পরাজয়। যদি তাতাররা তাদের উপর বিজয়ী হয়, তাহলে ইসলামের কোনো মান-মর্যাদা থাকবে না, কোনো বুলন্দ কালিমা থাকবে না এবং ইসলামের জন্য যুদ্ধ করার কোনো বিজয়ী বাহিনীও থাকবে না, যাদেরকে কা-ফে-ররা ভয় করবে। তাই মুসলিমদের মধ্যে যারা তাতারদের বাহিনীতে যোগ দিবে, তারা তাতারদের অনেকের চেয়েও যু-দ্ধের বেশি উপযুক্ত হবে। কেননা তাতারদের মধ্যেও কেউ কেউ বাধ্য হয়ে যুদ্ধ করতে আসে। ….পক্ষান্তরে মুসলিম দাবিদারদের মধ্যে মুনাফিক, যি-ন্দী-ক বা ফাসেক ব্যতীত কেউ স্বেচ্ছায় তাতারদের সাথে মিলিতে হতে পারে না। তাতাররা যদি কাউকে বাধ্য করে (মুসলিমদের বিরুদ্ধে যু-দ্ধে আসতে), তবে সে তার নিয়ত অনুযায়ী হাশরের ময়দানে উত্থিত হবে। আমাদের দায়িত্ব তো পুরো বাহিনীর সাথেই যুদ্ধ করা।” -মাজমুউল ফাতাওয়া: ২৮/৫৩৪ (মাজমাউল মালিক ফাহাদ, সৌদি)
তবে কা-ফে-রদের মোকাবেলায় যেহেতু বর্তমানে মুসলিমরা দুর্বল, এজন্য কখন কোন অঞ্চলে কার বিরুদ্ধে কি-তা-ল করা হবে, কার বিরুদ্ধে করা হবে না, কাকে হ-ত্যা করা হবে, কাকে করা হবে না, এসব বিষয়ে অবশ্যই মাফসাদা মাসলাহার (কল্যাণ-অকল্যাণের) বিচার বিশ্লেষণ করে পদক্ষেপ নিতে হবে। বস্তুত যার সঠিক সিন্ধান্ত নিতে পারেন বিজ্ঞ আলেম ও সমর বিশেষজ্ঞ মু-জা-হি-দরা। অন্যদের দায়িত্ব এবিষয়ে মু-জা-হি-দ নেতৃত্বের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা। -আল-মুগনী: ৯/২০২, ২১৩-২১৪ (দারুল হাদীস); মুগনিল মুহতাজ: ৬/২৪ (দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ)
উল্লেখ্য, এ হচ্ছে সামগ্রিকভাবে তা-গু-ত বাহিনীর বিরুদ্ধে কি-তা-লের কথা। পক্ষান্তরে কোনো তা-গু-ত সেনা যদি অন্যায়ভাবে আপনার উপর আক্রমণ করে, তাহলে আপনি আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী আত্মরক্ষা করবেন। প্রয়োজনে আপনি তার সাথে কি-তা-ল করবেন। এক্ষেত্রে যদি আপনার হাতে সে নিহত হয়, তাহলে সে জাহান্নামী হবে, আর যদি তার হাতে আপনি নিহত হন তাহলে আপনি শহীদ গণ্য হবেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
مَنْ قُتِلَ دُونَ مَالِهِ فَهُوَ شَهِيدٌ، وَمَنْ قُتِلَ دُونَ أَهْلِهِ فَهُوَ شَهِيدٌ، وَمَنْ قُتِلَ دُونَ دِينِهِ فَهُوَ شَهِيدٌ، وَمَنْ قُتِلَ دُونَ دَمِهِ فَهُوَ شَهِيدٌ. –مسند أحمد ط الرسالة: 1652، سنن الترمذي: 1421، قال الترمذي: هذا حديث حسن صحيح. اهـ
“যে ব্যক্তি তার মাল রক্ষার্থে নিহত হবে সে শহীদ। যে তার পরিবার-পরিজন রক্ষার্থে নিহত হবে সেও শহীদ। যে তার দীন রক্ষার্থে নিহত হবে সেও শহীদ। যে তার প্রাণ রক্ষার্থে নিহত হবে সেও শহীদ।” -মুসনাদে আহমাদ: ১৬৫২, সুনানে তিরমিযী: ১৪২১
অন্য হাদীসে এসেছে,
عن أبى هريرة قال جاء رجل إلى رسول الله -صلى الله عليه وسلم- فقال يا رسول الله أرأيت إن جاء رجل يريد أخذ مالى قال « فلا تعطه مالك ». قال أرأيت إن قاتلنى قال « قاتله ». قال أرأيت إن قتلنى قال « فأنت شهيد ». قال أرأيت إن قتلته قال « هو فى النار ». –صحيح مسلم: 377
“হযরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে আরজ করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনি কি বলেন, যদি কোনো ব্যক্তি আমার মাল কেড়ে নিতে আসে? তিনি উত্তর দেন, তাকে তোমার মাল দেবে না। ঐ ব্যক্তি আরজ করল, যদি সে আমার সাথে কি-তা-লে জড়ায়? তিনি উত্তর দেন, তুমিও তার সাথে কি-তা-ল কর। ঐ ব্যক্তি আরজ করল, যদি সে আমাকে হ-ত্যা করে? তিনি উত্তর দেন, তাহলে তুমি শহীদ হবে। ঐ ব্যক্তি আরজ করল, যদি আমি তাকে হ-ত্যা করি? তিনি উত্তর দেন, তাহলে সে জাহান্নামে যাবে।” -সহীহ মুসলিম: ৩৭৭
আর আপনি যা বলেছেন যে, ‘কোনো মুসলিমকে হ-ত্যা করা তো খা*রে*জিদের কাজ’ কথাটি ঢালাওভাবে সহীহ নয়। খা-ও-য়া-রি-জরা মূলত কবীরা গুনাহের কারণে মুসলিমদের কা-ফে-র আখ্যায়িত করে তাদের জান মাল হালাল গণ্য করে। পক্ষান্তরে মুসলিম যখন হ-ত্যার উপযুক্ত কোনো অপরাধে লিপ্ত হয়, তখন তাকে হ-ত্যা করা জায়েয, বরং ক্ষেত্র বিশেষে ওয়াজিব। যেমন মুসলিম যদি অন্য মুসলিমের জান-মাল-ইজ্জতের উপর হামলা করে আর তাকে হ-ত্যা ব্যতীত প্রতিহত করা সম্ভব না হয়, তখন তাকে হ-ত্যা করে ফেলাই বিধান। যেমনটা উপর্যুক্ত হাদীসে দেখেছেন।
فقط، والله تعالى أعلم بالصواب
আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)
২৬-০৮-২০২৫ঈ